BCD বা 8421 কোডঃ
BCD এর পূর্ণ অর্থ Binary Coded Decimal, এই
কোড পদ্ধতি বাইনারী বিট ও
ডেসিম্যাল ডিজিটের মধ্যে সম্পর্ক
সৃষ্টিকারী কোড এবং এই
পদ্ধতিতে প্রতিটি ডেসিম্যাল
ডিজিটকে এনকোড করার জন্য ৪বিট
বাইনারী সংখ্যা প্রয়োজন। উদাহরণসরূপ
(35) 10 কে BCD তে এনকোড করলে পাই
(00110101) BCD যেখানে (35) 10 এর সমতূল্য
বাইনারী সংখ্যাটি (100011) 2 হবে।
উল্লেখিত উদাহরণটি হতে ইহা স্পষ্ট
যে, কোন দশমিক সংখ্যাকে BCD
কোডে রূপান্তর করতে সাধারণ
বাইনারী রূপান্তরের তুলনায় অধিক
সংখ্যক বিট প্রয়োজন। ডিজিটাল
সিস্টেমে ইনপুট এবং আউটপুট
অপারেশনে BCD কোড ব্যবহৃত হয়।
BCD কোডটি 8421 কোড নামেও
পরিচিত, কারন BCD কোডের
চারটি বিটের স্থানীয় মান বা ওয়েট
8, 4, 2, 1 এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। BCD
কোডের LSB এর মান 2 0 বা 1 ,
পরবর্তী উচ্চতর গুরুত্ত্ব সম্পন্ন বিটের মান
2 1 বা 2 পরবর্তী উচ্চতর বিটের মান 22
বা 4 এবং MSB এর মান 23 বা 8 । এ
কারনে এটি একটি ওয়েটেড কোড
এবং এই কোডে গাণিতিক
অপারেটরের অপারেশন যেমনঃ যোগ,
বিয়োগ ইত্যাদি করা সম্ভব। যেহেতু
0×8+1×4+0×2+1×1=5
সুতরাং আমরা বলতে পারি (0101) BCD এর
প্রতিটি বিটের ওয়েটসমূহের
মাধ্যমে ডেসিম্যাল অংক 5
কে প্রতিস্থাপন করা যায়। যেহেতু BCD
কোডে চারটি বাইনারী বিট ব্যবহার
করা হয় সেহেতু বিটসমূহের বিন্যাসের
মাধ্যমে সবোর্চ্চ 0 থেকে 15 পর্যন্ত
দশমিক সংখ্যাসমূহ প্রকাশ করা সম্ভব।
কিন্তু বাস্তবে BCD কোডের
মাধ্যমে শুধুমাত্র 0 থেকে 9 পর্যন্ত দশমিক
সংখ্যাসমূহকে প্রকাশ করা হয়। যদিও
বাইনারী কোডসমূহ 1010, 1011, 1100, 1101,
1110, 1111 যথাক্রমে দশমিক সংখ্যা 10,
11, 12, 13, 14, 15 কে প্রকাশ
করে তথাপি এই কোডসমূহ BCD
পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় না। সুতরাং এই
৬টি কোডসমূহকে বলা হয় নিষিদ্ধ কোড
এবং ৬টি কোডের গ্রুপকে BCD পদ্ধতির
নিষিদ্ধ গ্রুপ বলা হয়।
বুলিয়ান
বীজগণিতের
পরিচয়ঃ
গণিতশাস্ত্র এবং গাণিতিক
যুক্তি বিদ্যায় ‘বুলিয়ান
বীজগণিত’ কে বীজগণিতের
একটি শাখা হিসাবে গন্য
করা হয়। বুলিয়ান
বীজগণিতে ব্যবহৃত
ভেরিয়েবলসমূহের দুটি স্তর
বা মান থাকে একটি ‘সত্য বা
True’ এবং অপরটি ‘মিথ্যা বা
False’ । লিখার
সুবিধার্থে সত্যকে ‘1’
দ্বারা এবং ‘মিথ্যাকে ‘0’
দ্বারা প্রকাশ করা হয়। বুলিয়ান
বীজগণিতের এই দ্বিস্তরীয়
বৈশিষ্ট্যের
কারনে পরবর্তী যুগে যখন
কম্পিউটার এবং বিভিন্ন
ডিজিটাল ইলেকট্রনিক
সার্কিটে বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতির
ব্যবহার শুরু হয় তখন বিভিন্ন
জটিল যৌক্তিক
অপারেশনসমূহের সমাধান
এবং সরলীকরণের
ক্ষেত্রে বুলিয়ান বীজগণিত
ব্যবহার করা হতো। তখন থেকেই
গণিত শাস্ত্রের এ
শাখাটি ব্যাবহারিকভাবে প্রকৌশল
বিদ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট
হয়ে ব্যবহার
হতে থাকে এবং বর্তমানে কম্পিউটার
ও ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের
উন্নয়নে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত
হচ্ছে। ব্যবহারিক
বা প্রয়োগিক
ক্ষেত্রে বুলিয়ান বীজগণিত
একটি বিশেষ ধরনের
বীজগাণিতীয়
পদ্ধতি যা দুটি লজিক অবস্থা ‘1’
এবং ‘0’ নিয়ে কাজ করে।
ডিজিটাল সার্কিটসমূহ বহু
সংখ্যক সুইচ নিয়ে গঠিত যার
‘ON’ অবস্থাকে লজিক ‘1’ এবং
‘OFF’ অবস্থাকে লজিক ‘0’
দ্বারা উপস্থাপন করা হয়,
এবং যা বুলিয়ান
বীজগণিতের দুটি স্তর ‘সত্য বা
True’ এবং ‘মিথ্যা বা False’ এর
সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ।
একারনেই ডিজিটাল
সার্কিটসমূহের লজিক
মেনিপুলেশনের (Manipulation)
জন্য বুলিয়ান বীজগণিত
একটি আদর্শ পদ্ধতি। Logical
Veriable এবং Logical Operation
সমন্বয়ে গঠিত বীজগণিতই
বুলিয়ান বীজগণিত।
উৎপত্তিঃ
১৮৪৭ সালে ইংলিশ গণিতবিদ
জর্জ বুলি (George Boole) তার বই
‘The Mathematical Analysis of Logic’ এ
লজিক সমীকরণ বিশ্লেষণের মূল
ও আদি সূত্রসমূহ গাণিতিক
পরিভাষায় উস্থাপন করেন
যা বর্তমানে আধুনিক
ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট ডিজাইন
এবং অধিকাংশ
প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে কোর
ডাটা টাইপ হিসাবে ব্যবহৃত
হচ্ছে। যুক্তি বিশ্লেষণের
প্রয়োজনে ১৮৫৪ সালে জর্জ
বুলি তার অপর গ্রন্থ ‘An
Investigation of the Laws of Thought’ এ
একটি বিশেষ ধরণের
বীজগাণিতিক
পদ্ধতি উপস্থাপন করেন যার
সাহায্যে লজিক ‘Logic’ এর
‘Systematic Treatment’
বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়
এবং এটি বর্তমানে বুলিয়ান
বীজগণিত নামে পরিচিত।
কিন্তু তার এই আবিষ্কার ১৯৩৮
সালের পূর্ব পর্যন্ত বিশেষ কোন
ব্যবহারিক কাজে আসেনি।
পরবর্তী সময়ে গত বিংশ
শতাব্দীর গোড়ার
দিকে ইংলিশ গবেষক ‘William
Stanley Jevons’, জার্মান
গণিতবিদ ‘Friedrich Wilhelm Karl
Ernst Schröder’, এবং আমেরিকান
গণিতবিদ ‘Edward Vermilye
Huntington’ প্রমুখ গবেষকগণের
গবেষণা দ্বারা বুলিয়ান
বীজগণিত আরো কিছুটা গঠিত
তত্ত্বভিত্তিক গাণিতিক
কাঠামো লাভ করে।
পরবর্তীতে ১৯০৪ সালে ‘E. V.
Huntington’ কিছু স্বতঃসিদ্ধ
উদ্ভাবন করেন যা বুলিয়ান
বীজগণিতকে আরো গঠিত
রূপে সংগায়িত
করতে সাহায্য করে। ১৯৩০
সালে আমেরিকান গণিতবিদ
‘Claude Elwood Shannon’
সুইচিং সার্কিট নিয়ে কাজ
করার সময় প্রত্যক্ষ করেন যে,
বুলিয়ান বীজগণিতের
স্বতঃসিদ্ধসমূহ
ব্যবহারিকভাবে সুইচিং সার্কিট
বাস্তবায়নের
কাজে লাগানো যায়
এবং তিনি টেলিফোনের
সুইচিং বর্তনীতে সর্বপ্রথম
বুলিয়ান বীজগণিতের বাস্তব
প্রয়োগ ঘটান। ১৯৩৮
সালে স্যার শ্যানন ‘Two-Valued
Boolean Algebra’ পদ্ধতির উন্নয়ন
করেন এবং ব্যাখ্যা করেন যে,
বাইস্ট্যাবল ইলেকট্রিক
সুইচিং সার্কিটের
বৈশিষ্ট্যসমূহ এই
বীজগাণিতীয় পদ্ধতির
মাধ্যমে উপস্থাপন করা সম্ভব।
বর্তমানে বুলিয়ান বীজগণিত
ডিজিটাল সিস্টেম
ডিজাইনে ব্যপকভাবে ব্যবহার
হচ্ছে।
১। লজিক্যাল ভেরিয়েবল
২। কনস্ট্যান্ট বা ধ্রুবক
৩। অপারেটর
৪। স্বতঃসিদ্ধ ও উপপাদ্যসমূহঃ
১। লজিক্যাল
ভেরিয়েবলঃ সাধারণ
বীজগণিতের মতই বুলিয়ান
বীজগণিতে ভেরিয়েবলের
ব্যবহার রয়েছে যাদের
বিভিন্ন ইংরেজী বর্ণ A, B, C, D
ইত্যাদি দ্বারা প্রকাশ করা হয়
তবে বুলিয়ান
ভেরিয়েবলসমূহের লজিক্যাল
মান ‘সত্য’ এবং ‘মিথ্যা’ অর্থাৎ
‘1’ এবং ‘0’ এ দুটির মধ্যেই
পরিবর্তনশীল।
২। কনস্ট্যান্ট বা ধ্রুবকঃ
বুলিয়ান বীজগণিতে ‘1’
এবং ‘0’ এ দুটি লজিক্যাল
ধ্রুবকের ব্যবহার রয়েছে।
ধ্রুবকের মান সর্বদা স্থির
থাকে। মনে রাখতে হবে যে,
দেখতে একই রকম মনে হলেও
বুলিয়ান বীজগণিতে ব্যবহৃত ‘1’
ও ‘0’ এবং বাইনারী অংক ‘1’ ও
‘0’ একই বিষয় নয়।
বাইনারী সংখ্যাপদ্ধতির ‘1’
এবং ‘0’ হলো দুটি অংক কিন্তু
বুলিয়ান বীজগণিতের ‘1’
হলো ‘লজিক সত্য’ এবং ‘0’
হলো ‘লজিক মিথ্যার’
সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।
৩। অপারেটরঃ ভেরিয়েবল
এবং কনস্ট্যান্টের উপর বিভিন্ন
লজিক্যাল অপারেশন
চালানোর জন্য ব্যবহৃত প্রতীক
বা চিহ্নকে অপারেটর বলা হয়।
বুলিয়ান বীজগণিতে ব্যবহৃত
মৌলিক অপারেটর
তিনটি যেমনঃ AND যাকে (.)
চিহ্ন দ্বারা, OR যাকে (+) চিহ্ন
দ্বারা এবং NOT যাকে ´
অথবা ¯ চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ
করা হয়।
৪। স্বতঃসিদ্ধসমূহঃ
(Postulates ): বুলিয়ান
বীজগণিতে শুধুমাত্র বুলিয়ান
যোগ এবং বুলিয়ান গুণের
সাহায্যে সকল হিসাব করা হয়।
যোগ এবং গুণের ক্ষেত্রে এই
বীজগণিত কিছু বিশেষ নিয়ম
মেনে চলে। এই
নিয়মসমূহকে স্বীকার্য
বা স্বতঃসিদ্ধ বা ‘Postulates’
বলা হয়।
বুলিয়ান যোগের
ক্ষেত্রে স্বতঃসিদ্ধসমূহ
নিম্নরূপঃ
0 + 0 = 0 ………………. (i)
0 + 1 = 1 ……………… (ii)
1 + 0 = 1 ……………… (iii)
1 + 1 = 1 ……………… (iv)
সমীকরণ (i ) হতে সমীকরণ (iii )
পর্যন্ত যোগগুলি আমাদের
পরিচিত বীজগণিতের
নিয়মের সাথে মিল
আছে কিন্তু সমীকরণ (iv ) এর
সাথে আমাদের পরিচিত
বীজগণিতের কোন মিল নেই।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে বুলিয়ান
বীজগণিতের ‘+’ চিহ্ন সাধারণ
যোগকে বুঝায় না। বুলিয়ান
যোগকে লজিক্যাল OR
অপারেশন বলা হয়।
বুলিয়ান বীজগণিতের ভাষায়
‘0’ এবং ‘1’ কে একটি অপরটির
পূরক বলা হয়। পূরককে প্রকাশ
করা হয় NOT অপারেটরের চিহ্ন ´
অথবা ¯ দ্বারা।
উদাহরণসরূপঃ ‘0’ এর পূরক ‘1’
এবং ‘1’ এর পূরক ‘0’। উক্ত
বিষয়টি বুলিয়ান
ভেরিয়েবলের জন্য লেখা হয়
‘A’ এর পূরক ‘A̅’ আবার ‘A̅’ এর পূরক ‘A’।
কখনো কখনো ‘A̅’ কে A´ দ্বারাও
প্রকাশ করা হয়। যদি A = 0 হয়
তবে A̅ = 1 আবার A = 1 হলে A̅ = 1
হবে।
হান্টিংটনের
(Huntington ’ s)
স্বতঃসিদ্ধসমূহঃ
১৯০৪ সালে ‘E. V. Huntington’ কিছু
স্বতঃসিদ্ধ ব্যাখ্যা করেন
যা বুলিয়ান
বীজগণিতকে সুগঠিত
রূপে সংগায়িত
করতে সাহায্য করে তবে শুধু
হান্টিংটনের স্বতঃসিদ্ধসমূহ
দ্বারা পরিপূর্ণভাবে বুলিয়ান
বীজগণিতকে সংগায়িত
করা যায় না আরো কিছু
স্বতঃসিদ্ধ প্রয়োজন হয়।
বুলিয়ান বীজগণিত
হান্টিংটনের
স্বতঃসিদ্ধান্তসমূহ
মেনে চলে যা নিম্নে উল্লেখিত
হয়েছে –
১। (ক) + অপারেটরের
সাপেক্ষে Closure (খ) .
অপারেটরের সাপেক্ষে
Closure
২। (ক) + অপারেটরের
সাপেক্ষে 0 দ্বারা একটি
Identity Element যেমনঃ X+0 = 0+X =
X (খ) . অপারেটরের
সাপেক্ষে 1 দ্বারা একটি
Identity Element যেমনঃ X.1 = 1.X =
X
৩। বিনিময় সূত্রঃ (ক) +
অপারেটরের
সাপেক্ষে বিনিময় যেমনঃ X
+Y = Y+X (খ) . অপারেটরের
সাপেক্ষে বিনিময়
যেমনঃ X.Y = Y.X
৪। বিতরণ সূত্রঃ (ক) +
অপারেটরকে . এর উপর বিতরণ,
যেমনঃ X+(Y.Z)=(X+Y).(X+Z) (খ) .
অপারেটরকে + এর উপর বিতরণ,
যেমনঃ X.(Y+Z)=(X.Y)+(X.Z)
৫। সেট B এর
প্রতিটি উপাদানের
কমপ্লিমেন্ট উক্ত সেটের
একটি উপাদান হবে, অর্থাত
X∈B হলে X′∈B হবে।
এক্ষেত্রেঃ (ক) X+X′=1 এবং (খ)
X.X′=0 হবে।
৬। সেট B এর নূন্যতম
দুটি আলাদা উপাদান
থাকতে হবে যেখানে উপাদান
দুটি পরস্পর অসমান হবে।
যেমনঃ X,Y∈B যেখানে X≠Y।
অর্থাত বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধসমূহ
ব্স্তবায়নের জন্য নূন্যতম দুটি
Logical Element প্রয়োজন।